What is Zakat?A collected Bn article.
‘যাকাত’ কী, কেনো?
--------------------------------------
ইসলামের প্রথাগত ঘরণায় (Traditionalist) অর্থাৎ প্রচলিত মোল্লাতান্ত্রিক ডিসকোর্সে ‘যাকাত’ বলতে বোঝায় অর্জিত সম্পদের উপর নির্দিষ্ট অনুপাতে (২.৫%) ধার্যকৃত আবশ্যকীয় দান/কর পরিশোধ করা। যাকাতের তাৎপর্য সংকীর্ণ অর্থে সম্পদের পরিশুদ্ধতার জন্যে, ব্যাপক অর্থে নফসের পরিশুদ্ধতার জন্যে। দানকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে, যেখানে যাকাত হচ্ছে আবশ্যকীয় দান ও সাদাকা ঐচ্ছিক দান। তবে কুর’আনের যাকাত ও দান সম্পর্কিত আয়াতগুলি পাঠ করে যাকাতের এমন অর্থ যথার্থ মনে হয় না।
--
(২) কুর’আনে ‘যাকাত’ শব্দটি এসেছে অনেকবার, কিন্তু সম্পদের উপর নির্দিষ্ট অনুপাতে ধার্যকৃত আবশ্যকীয় করারোপ, বা দান হিসেবে একবারও উল্লেখ করা হয় নি। ব্যয় করা বা দান করা বোঝাতে সাদাকা ও 'আনফাক' শব্দটি এসেছে কুর'আনে। কল্যাণ কাজে নিজের অর্জিত সম্পদ থেকে ব্যয় বা দান করা প্রত্যেক স্বচ্ছল মুসলিমের জন্য আবশ্যকীয় মনে করাই উচিত কেননা তা আল-লাহর নির্দেশ, এটি ঐচ্ছিক বিষয় নয়, আর যা সাধারণ বিবেকবোধ দিয়ে উপলব্ধ হয়। যাকাতের নামে যা দান করা হয়, তা মূলত সাদাকা বা আনফাক (ব্যয় করা)। যতোবার দানের কথা এসেছে তা ‘যাকাত’ নয় সাদাকা’, 'আনফাক' শব্দের সাথে বা তার আনুষঙ্গিক হয়ে এসেছে। কুর’আনে কোথাও আবশ্যকীয় বা ঐচ্ছিক রূপে বা অর্জিত সম্পদের উপর দার্যকৃত হারে দানের উল্লেখ নেই।
-
নিচের আয়াতগুলিতে কল্যাণ কাজে ব্যয় করা বা দান করা সংক্রান্ত, কিন্তু কোথাও 'যাকাত' শব্দটির উল্লেখ নেই, উল্লেখ আছে 'সাদাকা' ও 'আনফাক' শব্দগুলি।-
-
‘তারা তোমাকে জিজ্ঞেস করে, কী তারা ব্যয় (আনফাক) করবে; বলো, কল্যাণের জন্য যা কিছু তোমরা ব্যয় করো, তা হবে পিতা-মাতা, আত্নীয়-পরিজন, অনাথদের জন্যে, দুঃস্থ-দরিদ্র ও পথচারী- মুসাফিরদের জন্যে; আর তোমরা যে সৎকর্মই করো, আললাহ সে বিষয়ে সম্যক অবহিত।’ (কুর’আন,২/২১৫)
'...আর তারা জিজ্ঞেস করে, তারা কী ব্যয় (ইউনফিকুনা) করবে (কী ব্যয় করা উচিত)? বলো, প্রয়োজনের অতিরিক্ত (যা কিছু); এভাবে আললাহ তাঁর আয়াত সমূহ তোমাদের কাছে স্পষ্ট করেন যাতে তোমরা উপলব্ধি করতে পারো।'(কুর’আন,২/২১৯ )
‘যারা নিজেদের ধনসম্পদ আললাহর (নির্দেশিত) পথে ব্যয় (আনফাক) করে, তাদের তুলনা একটি শস্যবীজের মতো, যা থেকে সাতটি শীষ জন্মায়, প্রতিটি শীষে থাকে একশটি করে শস্যদানা; আললাহ যার প্রতি ইচ্ছা করেন তাকে বহুগুণ প্রবৃদ্ধি দান করেন; আললাহ অনন্ত প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।’(কুর’আন,২/২৬১)
‘যারা আললাহর (নির্দেশিত)পথে ধনসম্পত্তি ব্যয় (আনফাক) করে আর এরপর দানের কথা প্রচার করে না ও কষ্টও দেয় না, তাদের পুরস্কার রয়েছে তাদের পালনকর্তার কাছে; আর তাদের কোনো ভয় নেই, তারা দুঃখিতও হবে না।’(কুর’আন,২/২৬২)
‘নম্র কথার মাধ্যমে ক্ষমাপরায়নতা অবলম্বন করা ঐ দানের (সাদাকা) চেয়ে উত্তম যার পরে কষ্ট দেয়া হয়।; আললাহ অভাবমুক্ত, সহনশীল।’(কুর’আন,২/২৬৩)
‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা দানের কথা প্রকাশ করে ও কষ্ট দিয়ে নিজেদের দানকে (সাদাকা) ঐ ব্যক্তির ন্যায় নষ্ট করো না, যে তার ধন-সম্পদ শুধু লোক দেখানোর জন্য ব্যয় (আনফাক) করে, এবং আললাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে না; তার দৃষ্টান্ত হলো একটি শিলাখন্ডের মতো, যার উপর কিছু মাটির আস্তরণ পড়েছিলো; এরপর প্রবল বর্ষণ হলো, একে ধুয়ে সম্পূর্ণ সাফ করে দিলো; তাদের উপার্জন তাদের কোনো কাজে এলো না; আর আললাহ সত্য অস্বীকারকারীদেরকে পথ দেখান না।’(কুর’আন,২/২৬৪)
‘আর যারা ব্যয় করে (আনফাক) আললাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায়, আর তাদের অন্তরকে সুদৃঢ় করার জন্য,
তাদের দৃষ্টান্ত হলো, কোনো টিলায় অবস্থিত একটি বাগানের মতো, যেখানে মুষল ধারে বৃষ্টি হলে দ্বিগুণ ফল উৎপন্ন হয়, আর প্রবল বর্ষণ না হলেও হালকা ঝিরঝির বৃষ্টিই যথেষ্ট; আর তোমরা যাই করো আললাহ তা দেখেন।’ (কুর’আন,২/২৬৫)
‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা যা অর্জন করো আর আমি তোমাদের জন্য জমিন থেকে উৎপন্ন করি, তা থেকে ভালো জিনিস ব্যয় করো (আনফাক), আর তা থেকে খারাপ জিনিস বেছে দান করতে যেও না, যখন চোখ বন্ধ না করে তোমরাই তা নিজেদের),আয়াত- জন্য গ্রহণ করবে না,আর জেনে রেখো আললাহ অভাব মুক্ত, প্রশংসিত।’(কুর’আন,২/২৬৭)
‘কল্যাণমূলক যা কিছু তোমরা ব্যয় করো (আনফাক) বা ব্যয় করার প্রতীজ্ঞা (মানত) করো, নিশ্চয় আললাহ তা জানেন; অন্যায়কারীদের কোনো সাহায্যকারী নেই।’(কুর’আন,২/২৭০)
‘তোমরা যদি প্রকাশ্যে দান করো (সাদাকা), তা ভালো, আর যদি তা গোপনে করো ও অভাবগ্রস্তদেরকে দাও, তা আরও ভালো, এতে(দানের কারণে)তোমাদের কিছু পাপমোচন হবে; আর তোমরা যা কিছু করো আললাহ তা জানেন।’ (কুর’আন,২/২৭১)
‘তাদেরকে সৎপথে আনার দায়িত্ব আপনার নয়, বরং আললাহ যাকে ইচ্ছা সৎপথে পরিচালনা করেন;
আর যা কিছু ভালো তোমরা ব্যয় করো (আনফাক) সে তো নিজেদের কল্যাণের জন্যই করো, তোমরা আললাহর সন্তুষ্টি ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ব্যয় করো না;
কল্যাণমূলক যা কিছু তোমরা ব্যয় করো তার প্রতিদান পুরোপুরি দেয়া হবে, আর তোমাদের প্রতি কোনো অন্যায় করা হবে না।’ (কুর’আন,২/২৭২)
‘(সাহায্য-দান) ঐ সমস্ত অভাবী মানুষের জন্য, যারা আললাহর পথে আবব্ধ হয়ে পড়েছে, অন্যত্র বিচরণ করতে পারে না, তাদের নিবৃত্তি(সংযম) দেখে নির্বোধেরা তাদেরকে স্বচ্ছল মনে করে; তোমরা তাদেরকে তাদের লক্ষণ দিয়ে চিনতে পারবে; তারা মানুষের কাছে কাকুতি-মিনতি করে সাহায্য চায় না; আর তোমরা কল্যাণকাজে(দাতব্য) যা কিছু ব্যয় করো, নিশ্চয় আললাহ তা জানেন।’ (কুর’আন,২/২৭৩
‘যারা নিজেদের সম্পদ রাতে ও দিনে, গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে (আনফাক), নিশ্চয় তাদের পুরষ্কার আছে তাদের প্রতিপালকের কাছে; আর তাদের কোনো ভয় নেই, তারা দুঃখিতও হবে না।’ (কুর’আন,২/২৭৪)
‘আললাহ সুদকে ক্ষয়িষ্ণু করেন, আর দানকে (সাদাকা) বর্ধিত করেন; আললাহ অকৃতজ্ঞ, অপরাধীকে ভালোবাসেন না।’ (কুর’আন,২/২৭৬)
‘যদি ঋণগ্রহী দুর্দশাগ্রস্ত হয়, তবে অবস্থা ফিরে না আসা পর্যন্ত তাকে সময় দাও, আর যদি দান (সাদাকা) হিসেবে মার্জনা করে দাও, তবে তা আরও উত্তম, যদি তোমরা তা উপলব্ধি করো।’(কুর’আন,২/২৮০)
‘প্রিয় বস্তু ব্যয় (আনফাক) না করলে তোমরা যথার্থ পূণ্য লাভ করতে পারবে না, তোমাদের ব্যয় করা বস্তু সম্পর্কে আললাহ ভালো জানেন।’ (কুর’আন,৩/৯২)
‘যারা ব্যয় করে (আনফাক), সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায় আর তারা ক্রোধ দমন করে, আর ক্ষমা করে মানুষকে ; আললাহ সৎ কর্মশীলদের ভালোবাসেন।’(কুর’আন,৩/১৩৪)
‘আর সম্পদ বন্টনের সময় যদি নিকট আত্মীয়-স্বজন,এতিম,অভাবগ্রস্তরা উপস্থিত হয় তখন তা থেকে তাদেরকেও কিছু দিও,আর তাদের সাথে মহানুভবতার সঙ্গে কথা বলো।’ (কুর’আন,৪/৮)
‘তাদের গোপন শলা-পরামর্শের অধিকাংশের মধ্যেই ভালো কিছু নেই, তবে যে লোকজনের মাঝে দাতব্য (সাদাকা), মহানুভবতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য নির্দেশ দেয় তার কথা ভিন্ন; যে আললাহর সন্তুষ্টির জন্য কল্যাণ কাজে নিয়োজিত থাকে আমি তাকে বড় পুরষ্কার দিবো।’ (কুর’আন,৪/১১৪)
‘ওহে বিশ্বাসীগণ!অনেক ধর্মীয় বুজুর্গ ও পন্ডিতবর্গ অন্যের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করে চলেছে; এবং মানুষকে আল-লাহর পথ থেকে নিবৃত্ত রাখছে। আর যারা সোনা-রূপা জমা করে রাখে, আললাহর পথে ব্যয় (আনফাক) করে না তাদেরকে এক কষ্টকর যন্ত্রণার শাস্তির সংবাদ দিন।’(কুর’আন,-৯/৩৪)
‘সদকা(দাতব্য)শুধু তাদের হক যারা গরীব, নিঃস্ব, যারা সংশ্লিষ্ট কর্মচারী,যাদের মন জয়ের প্রয়োজন, দাস মুক্তির জন্য, ঋণগ্রস্তদের ঋণমুক্তির জন্য, আললাহর পথে সংগ্রামরতদের ও মুসাফিরদের জন্য; এটাই আললাহর বিধান; আললাহ সর্বজ্ঞ, জ্ঞানী।’(কুর’আন,৯/৬০)
‘বস্তুত, আত্ম-সমার্পণকারী(মুসলিম)পুরুষ ও আত্ম-সমার্পণকারী(মুসলিম)নারী,
বিশ্বাসী (ইমানদার)পুরুষ ও বিশ্বাসী(ইমানদার) নারী,
অনুগত পুরুষ ও অনুগত নারী,
সত্যবাদী পুরুষ ও সত্যবাদী নারী,
ধৈর্য্যশীল পুরুষ ও ধৈর্য্যশীল নারী,
বিনীত পুরুষ ও বিনীত নারী,
দানশীল (সাদাকা) পুরুষ ও দানশীল নারী,
সংযমী (সিয়াম পালণকারী) পুরুষ ও সংযমী (রোযা পালনকারী) নারী,
সতীত্ব রক্ষাকারী পুরুষ ও সতীত্ব রক্ষাকারী নারী,
অধিক হারে আল-লাহকে স্মরণকারী পুরুষ ও অধিক হারে আল-লাহকে স্মরণকারী নারী;
আললাহ তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন ক্ষমা ও মহা পুরুষ্কার।’ (কুর’আন,৩৩/৩৫)
--
(৩) তাহলে আলাদাভাবে ‘যাকাত’ শব্দের উল্লেখ রয়েছে কেনো কুর’আনে?
যাকাতের বুৎপত্তি গত অর্থ পবিত্রতা, পরিশুদ্ধতা, আত্মশুদ্ধি। কুর’আনে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সালাত প্রতিষ্ঠার সাথে যাকাতের নির্দেশনা এসেছে, যাকাত দেয়ার বিষয় হলে কাকে দেয়া হবে তার উল্লেখ নেই। কাজেই ‘ওয়াতুল যাকাতা’ ওয়াতুল মানে নির্দিষ্টভাবে ‘যাকাত দাও’ নয়, বরং ‘পরিশুদ্ধি অর্জন করো’, বা আনো’, । এ যাকাত নফসের পরিশুদ্ধতা অর্জনের জন্যে আল-লাহ’র নির্দেশিত পথে কল্যাণ কাজে আত্মনিয়োগ করা, নির্দিষ্ট হারে বাৎসরিক কর প্রদান বা দান নয়।
পরিশুদ্ধি বা পবিত্রতা অর্থে 'যাকাত শব্দটির প্রয়োগ সুস্পষ্ট কুর'আনের কতিপয় আয়াতে, সেখানে দান বা অন্য অর্থের প্রয়োগ প্রাসঙ্গিক হয় না বা সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় না।-
'ও হে ইয়াহিয়া! এ গ্রন্থ দৃঢ়ভাবে ধরো, আর শৈশবেই আমি তাকে দান করেছিলাম প্রজ্ঞা, আর আমার সহানুভূতি ও পবিত্রতা (যাকাত); আর সে ছিলো ধার্মিক।' (কুর’আন,১৯/১২,১৩)
'হে যারা বিশ্বাসীরা! শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না, আর যে শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে, বস্তুত সেতো অনৈতিক ও অন্যায় কাজেই প্ররোচিত করে; আর যদি তোমাদের উপর আললাহর করুণা ও ক্ষমা না থাকতো তবে তোমাদের মধ্যে কেউ কখনো পবিত্র/ পরিশুদ্ধ (যাকা/যাকাত) হতে পারতে না; আললাহ যাকে ইচ্ছা পরিশুদ্ধ করেন; আললাহ সব শোনেন, সব জানেন।'(কুর’আন,২৪/২১)
'ফেরাউনের কাছে যাও, নিশ্চয় সে সীমালঙ্ঘনকারী, আর তাকে বলো, তুমি কি আত্মশুদ্ধ (তাযাক্কা/যাকাত) হবে?'(কুর’আন,৭৯/১৭,১৮)
‘আর তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠা করো, আর পবিত্রতা অর্জন করো/পরিশুদ্ধ হও (যাকাত), আর যারা অবনত হয় তাদের সাথে অবনত হও।’ (কুর’আন,২/৪৩)
‘আর যখন আমি বনী ইসরাইলের কাছ থেকে অংগীকার নিয়েছিলাম যে, তোমরা আল-লাহ ছাড়া অন্যের উপাসনা করো না, আর পিতা-মাতা, আত্নীয়-স্বজন, এতীম ও দরিদ্রদের সাথে ভালো আচরণ করো, আর মানুষজনের সাহতে ভালো কথা বলো, আর তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠা করো, আর পবিত্র/পরিশুদ্ধ হও (যাকাত); অতঃপর তোমাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক ছাড়া মুখ ফিরিয়ে নিলে, আর তোমরা অস্বীকারীই রয়েছো।’(কুর’আন,২/৮৩)
'আর সালাত প্রতিষ্ঠা করো আর পবিত্র/পরিশুদ্ধ হও (যাকাত); আর তোমরা নিজের জন্য আগে থেকে যতোটুকু সৎকর্ম প্রেরণ করবে, তা আল-লাহর কাছে খুঁজে পাবে; নিশ্চয়! তোমরা যা কিছু করো, আললাহ তা দেখেন।' (কুর’আন,২/১১০)
‘সৎকর্ম শুধু এই নয় যে, পূর্ব কিংবা পশ্চিমদিকে মুখ করবে, বরং বড় সৎকাজ হল এই যে, ঈমান (বিশ্বাস)আনবে আললাহর উপর, কিয়ামত দিবসের উপর, ফেরেশতাদের উপর এবং সমস্ত নবী-রসূলগণের উপর, আর সম্পদ ব্যয় করবে তাঁরই ভালোবাসায় (আললাহর সুন্তুষ্টির জন্য) আত্মীয়-স্বজন,এতিম গরীব, মুসাফির, সাহায্য প্রার্থী, ও মুক্তিকামী ক্রীতদাসদের জন্য; আর যারা (নামায)প্রার্থণা প্রতিষ্ঠা করে, পবিত্র/পরিশুদ্ধ হয় (যাকাত), এবং যারা কৃতপ্রতিজ্ঞা সম্পাদনকারী ও অভাবে,রোগে শোকে ও যুদ্ধের সময় ধৈর্যধারণকারী- তারাই হলো সত্যাশ্রয়ী,আর তারাই পরহেজগার (সঠিকপথপ্রাপ্ত/ধার্মিক)।’(কুর’আন,২/১৭৭)
‘তোমাদের অভিভাবক (বন্ধু) কেবল মাত্র আললাহ; আর তাঁর রাসুল, আর বিশ্বাসীগণ, যারা সালাত প্রতিষ্ঠা করে, আর আত্মশুদ্ধ/ পরিশুদ্ধ হয় (যাকাত ), আর আললাহর সামনে বিনম্র(অবনত হয়)।’(কুর’আন,৫/৫৫)
'আর বিশ্বাসী পুরুষ ও বিশ্বাসী নারী একে অপরের সাহায়ক বন্ধু। তারা ভালো কাজের উপদেশ দেয় এবং মন্দ কাজে নিষেধ করে। নিয়মিত প্রার্থণা(সালাত) করে, আত্ম-শুদ্ধ (যাকাত) হয়, আর আললাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশ মেনে চলে। তাদেরকেই, আললাহ তাদের উপর করুণা বর্ষণ করবেন। নিশ্চয় আললাহ সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞানী।'(কুর’আন,৯/৭১)
'তোমার সৃষ্টিকর্তা জানেন তুমি রাতের প্রায় দুই তৃতীয়াংশ প্রার্থণায় জেগে থাকো, অথবা কখনো রাতের অর্ধেক, কখনো বা এক তৃতীয়াংশ, আর তোমার সাথের একটি দলও; আর আললাহ রাত ও দিনের পরিমাপ করেন। তিনি জানেন তোমরা সারা রাত জাগে থাকতে পারো না, তাই তিনি তোমাদের ক্ষমা করেছেন। তাই কুর’আনের যতোটুকু সহজ ততোটুকুই পড়ো, তিনি জানেন যে তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়বে, কেউ আললাহর অনুগ্রহ পেতে ভিন দেশে যাবে, এমনকি অন্যরা আললাহর জন্য সংগ্রামে লিপ্ত হবে! কাজেই কুর’আনের যতোটুকু সহজ তাই পড়ো। নামায প্রতিষ্ঠা করো,আর পরিশুদ্ধ হও (যাকাত) এবং আললাহকে দাও উত্তম ঋণ, আর নিজের জন্য যা কিছু ভালো অগ্রীম পাঠাবে, ফেরত পাবে আল-লাহর থেকে তার চেয়ে উত্তম ও বর্ধিত আকারে পুরষ্কার হিসেবে। ক্ষমা চাও আললাহর কাছে, আললাহ ক্ষমাশীল,পরম দয়ালু। '(কুর’আন,৭৩/২০)
‘আর তোমরা মানুষের ধন-সম্পদে বৃদ্ধি পাবে এ আশায় সুদে যা খাটাও,আললাহর কাছে তা বৃদ্ধি পায় না; কিন্তু তোমরা পবিত্রতা থেকে (যাকাত) যা দান করো আললাহকে পাওয়ার আশায়,তাই বহুগুণে বৃদ্ধি পায়।’(কুর’আন,৩০/৩৯)
এখানে নির্দিষ্টভাবে সম্পদ থেকে দান করার কথা বোঝানো হয়নি। তবে কল্যাণ কাজে নিজের উপার্জিত সম্পদের একাংশ দান করলে তা আল-লাহর নির্দেশ মেনেই নিজের নফসের যাকাত আদায়(পরিশুদ্ধতা অর্জন) হবে। যা কিছু ভালো, কল্যাণময়, তাই আত্মার পবিত্রতার জন্যে ফলদায়ক। দান করার মাধ্যমে, সত্য বলার মাধ্যমে, অনাচার- ব্যাভিচার থেকে দূরে থাকার মাধ্যমে, অশান্তি-হানাহানি থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে যাকাত আদায় হয়। যাকাত আদায় মানে পরিশুদ্ধতা অর্জন। এ জন্য মানুষের জন্য যাকাত এতো গুরুত্বপূর্ণ।
‘যে তার সম্পদ দান করে আত্মশুদ্ধির জন্য, আর কারো কাছ থেকে (তার উপর) কোনো প্রতিদান-অনুগ্রহ পেতে নয়, শুধুমাত্র প্রতিপালকের সন্তুষ্টি লাভের আশা ছাড়া। সে নিশ্চয়ই তৃপ্ত হবে।’(কুর’আন,৯২/১৮-২১)
--
(৪) এখন প্রশ্ন হলো, যদি যাকাতের প্রচলিত অর্থ ভুল হয়ে থাকে তবে এ বিভ্রান্তির কী কারণ? এ নিয়ে ঐতিহাসিক অনুসন্ধান করা উচিত। যেমন যাকাত নবী মোহাম্মদ (তার আত্মার প্রতি শান্তি) ও তাঁর পরিবার দান করেছেন, কিন্তু কখনো যাকাত দিয়েছেন, এমন তথ্য-প্রমাণ আমার জানা নেই। মদিনায় রাষ্ট্র কায়েমের পর থেকে খলিফাগণ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে সম্পদের একাংশ কর হিসেবে আরোপ করেন, এই করারোপ ছিলো স্বচ্ছলদের বাধ্যতামূলক। আর মুসলমান হিসেবে বাধ্যতামূলক এ দানের সাথে পরিশুদ্ধতার সম্পর্ক রচিত হয়। তখন থেকে কোনোভাবে যাকাত শব্দটি অর্থ-বিভ্রাটে আটকে পড়েছিলো কি?
Comments
Post a Comment